সৈয়দ বোরহান কবীর : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ভেবেছিলাম এ সময়টা দেশ উৎসবমুখর থাকবে। সব মত-পথের ভেদাভেদ ভুলে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অসাধারণ অর্জনকে বরণ করবে। বাঙালির আরেকটি অর্জন উপলক্ষে আনন্দমুখর এক পরিবেশ তৈরি হবে দেশজুড়ে। কিন্তু গত শনিবার সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ড যেন সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। মানুষের মৃত্যু, পোড়া লাশের গন্ধ, আহত, দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ সীতাকুন্ড থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের কোনায় কোনায়। সীতাকুন্ডের ঘটনা কি নিছক দুর্ঘটনা না নাশকতা-সে বিতর্কে আমি যাব না। এ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এসব তদন্ত কমিটি আশা করি সত্য উদঘাটন করবে। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যে এরকম নানা ঘটনা ঘটবে তা অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন। কদিন আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গার্মেন্টে অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। একান্তে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। আমাকে দেখালেন, আশুলিয়া থেকে এক কর্মী খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির তৎপরতার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাক্সিক্ষত ‘লাশ’ মেলেনি। গার্মেন্ট শ্রমিকরাও কয়েক দিন রাস্তায় নামলেন। সেটাও সরকার ভালোভাবে সামাল দিয়েছে। এর মধ্যে সীতাকুন্ডে অগ্নিকান্ড। কী জানি, নিছক দুর্ঘটনা মেনে নিতে মন সায় দেয় না। সীতাকুন্ডের ঘটনার পর কিছু মানুষের যেন উৎসব শুরু হলো। আর এই উৎসবের টার্গেট হলো পদ্মা সেতু। সীতাকুন্ডের দুর্ঘটনার পরপরই ফেসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল গুজব। সীতাকুন্ডের আগুনের চেয়েও যেন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সেসব গুজব। নানা জায়গা থেকে ফোন পেলাম। অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রশ্ন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নাকি হচ্ছে না? অনুষ্ঠানের আয়োজন নাকি বাতিল হয়েছে। ইত্যাদি নানা গুজবে অস্থির। কেউ কেউ তাহলে নিশ্চয়ই আছে এই সমাজে এই দেশে যারা পদ্মা সেতু চায়নি। এখন যখন পদ্মা সেতু বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত, তখন সেই অর্জন উপভোগের ক্ষণকেও ধূসর করতে চায়। আমি ভাবী, এত উর্বর মস্তিষ্ক মানুষের হয় কী করে। একটি দুর্ঘটনার সঙ্গে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আয়োজনকে কারা মেলায়, কেন মেলায়।
পদ্মা সেতু যখন প্রস্তুত তখন থেকেই বাংলাদেশে একের পর এক নানা ঘটনা ঘটছে। বিএনপি নির্বাচনের দেড় বছর আগে গণঅভ্যুত্থানের গল্প শোনাচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিরামহীনভাবে বাংলাদেশকে নানা নসিহত করছেন। এসব নসিহত মাঝে মাঝে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করছে। বাজারে আগুন। সয়াবিন তেল থেকে আলু সব পণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। ভরা মৌসুমে চালের বাজারে নানা কারসাজি। সরকারকে দেখে নেব, খেয়ে ফেলব জাতীয় কথাবার্তা কিছু মৌসুমি নেতার মুখে খইয়ের মতো ফুটছে। আর কিছু মন্ত্রী এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছেন, তা জনগণকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ করে তুলছে। ১৩ বছরে প্রথমবারের মতো সরকার চাপ অনুভব করছে অর্থনীতিতে। ডলার নিয়ে চলছে অস্থিরতা। এ অস্থিরতায় যোগ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বারবার সিদ্ধান্ত বদল। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ঘোষিত হলো বাজেট। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার অঙ্গীকার হলো বাজেটে। কিন্তু অর্থনীতিতে যতটা না সংকট, তার চেয়ে বেশি শঙ্কা ছড়ানোর পরিকল্পিত চেষ্টা। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। এত দিন মনে করতাম, সরকার বোধ হয় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। এ জন্যই জনমনে অস্বস্তি, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। কিন্তু সীতাকুন্ডের ঘটনা এবং তারপর পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি আমার চোখ খুলে দিয়েছে। সবকিছুর পরও যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে তখন আবার দুর্নীতির গল্প নতুন করে বলা হচ্ছে। পদ্মা সেতুকে টার্গেট করেই এসব আপাত বিচ্ছিন্ন কিন্তু পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলেই আমার ধারণা। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল, তারাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পদ্মা সেতুকে শেখ হাসিনার অর্জন মনে করে হিংসায় জ্বলছে। তারা কি বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার এই প্রতীক থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চায়? এ জন্য কি একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে? একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জনমনে অনিশ্চয়তার আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে? পদ্মা সেতু যখন প্রস্তুত তখনই শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয় শুরু হলো। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, শ্রীলঙ্কার এ অবস্থার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী। কিছু উচ্চাভিলাষী মেগা প্রকল্প দায়ী। কিছু মানুষ যেন বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠল। বাংলাদেশের পরিস্থিতি যে শ্রীলঙ্কার ধারেকাছেও নেই। এটা জানার পরও কেন মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা? উত্তর একটাই পদ্মা সেতু। আমি আশা করেছিলাম, পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেবে। বিএনপি দেশের এই অর্জনকে স্বাগত জানাবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছে তাদেরও দাওয়াত দেওয়া হবে। এমনকি দন্ডিত বেগম জিয়াকে যদি আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা না থাকে, তাহলে তাকেও দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। আমি ভেবেছিলাম বিএনপি এটাকে ইতিবাচকভাবে নেবে। কিন্তু এর কদিন পরই বিএনপি মহাসচিব পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর আবিষ্কার করলেন। স্বপ্নে পাওয়া তাবিজের মতো তিনি বেগম খালেদা জিয়ার ভিত্তিপ্রস্তরটি পেয়েছেন কি না আমি জানি না। তবে মির্জা ফখরুলকে একাধিক বিরল আবিষ্কারের জন্য একটা পদক দেওয়া যেতেই পারে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুদিন আগে দাবি করেছিলেন, ‘বেগম জিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা।’ এটি দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন তার লেখায়। এরপর বিএনপি মহাসচিব চুপসে যান। এর রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি বেগম জিয়ার জন্য কানাডা থেকে এক পদক আবিষ্কার করলেন। তার ঝোলা থেকে বের করা পদক নিয়ে যখন হাস্যরস তৈরি হলো তখন বিএনপি নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে থামালেন। এবার তিনি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফতোয়া দিলেন। এ নিয়ে এখন দেশে রং-তামাশা চলছে। একজন মন্ত্রী মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোর জন্য দুই কাপ চা পান করে বলে বিপদে পড়েছিলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং টকশোতে তাকে রীতিমতো ধুয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের ‘পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর’ তত্ত্বের পর সুধীজনের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখলাম না। তাহলে বিএনপির সঙ্গে কি আমাদের সুধীজনরাও পদ্মা সেতুতে মর্মব্যথী?
রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শ, নীতি ও কৌশলের পার্থক্য থাকবেই। এটা থাকাটাই স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক। কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল অভিন্ন চিন্তা লালন করবে, এটাই প্রত্যাশিত। সব গণতান্ত্রিক দেশ এটা করে। মুক্তিযুদ্ধ, দেশের স্বার্থ, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি না করাটাই সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ। কিন্তু আমরা দেখি আমাদের রাজনীতিতে সবকিছুতেই বিরোধিতার এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। এ বিষয়ে বিতর্কে বিএনপির বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির সেই পুরনো রেকর্ড বাজাচ্ছিলেন। দুর্নীতির প্রমাণ হিসেবে তিনি নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলেছেন। নির্মাণ ব্যয় বাড়লেই কি দুর্নীতি হয়? আমি কয়েকটি সাড়া জাগানো স্থাপনার উদাহরণ দিতে চাই। এইচ-থ্রি নামে পরিচিত হাওয়াইন হাইওয়ে নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ প্রকল্প নির্মিত হয় ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি খরচে।
দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সদর দফতর বার্লিনে। বার্লিনের নতুন বিমানবন্দরের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ইউরো। কিন্তু এটি নির্মাণ করতে জার্মানিকে ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ করতে হয়। অর্থাৎ নির্মাণ শেষে এর ব্যয় তিন গুণ বেড়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসএসসি (সুপার কনডাক্টিং সুপার কলিডের) প্রকল্প একটি বৈজ্ঞানিক স্থাপনা। ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে এটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দুই বছর নির্মাণকাজের পর এর ব্যয় বৃদ্ধি পায় ৯ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু এরপর দেখা যায় এই প্রকল্প শেষ করতে ১১ বিলিয়ন ডলার লাগবে। তখন এই প্রকল্প বাতিল করা হয়। এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। এ ধরনের বড় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এর সঙ্গে দুর্নীতির যোগসূত্র খুঁজতে যাওয়া স্রেফ অজ্ঞতা। বিশ্বব্যাংক যে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল তা আদালতেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কি আসলে দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল? নাকি বিশ্বব্যাংকের নিয়ন্ত্রকরা চায়নি বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক? পদ্মা সেতু এখন একটা সেতু নয়, আমাদের অগ্রযাত্রা এবং অহংকারের স্থাপনা। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের গৌরবের প্রতীক যেমন শহীদ মিনার, ৩০ লাখ শহীদের বীরত্বগাথার প্রতীক যেমন আমাদের স্মৃতিসৌধ, ঠিক তেমনি আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক হলো পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু প্রমাণ করেছে আমরা পারি। বাংলাদেশ হারে না। তাই এ অর্জন, অহংকারকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তারা আসলে বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী নয়। এরা বাংলাদেশ বিশ্বাস করে না।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল এ দেশের রাজাকার, আলবদররা। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করেছিল। তিন অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই আমরা স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম জাতির পিতার নেতৃত্বে। পদ্মা সেতু নিয়েও আমাদের লড়াই করতে হয়েছে তিন অপশক্তির বিরুদ্ধে। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক দাতারা পদ্মা সেতু চায়নি। ’৭১-এর মতো দেশে কিছু নব্য রাজাকার তৈরি হয়েছিল, যারা দুর্নীতির গল্প ফেঁদেছিল। পদ্মা সেতু হবে না বলে নানা কথা বলেছিল। আর পশ্চিমা দেশগুলো ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মতোই পদ্মা সেতু যাতে না হয় সে জন্য চেষ্টা করেছিল। ’৭১-রে যেমন বীর বাঙালি তার সীমিত শক্তি দিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করেছিল, বিজয় কেতন উড়িয়েছিল। পদ্মা সেতুও তেমনি। বাঙালি তার স্বপ্নের সেতু বানিয়েছে তিল তিল করে। পদ্মা সেতুতে যেমন বিত্তবানদের ট্যাক্সের টাকা আছে, তেমনি আছে গরিব রিকশাওয়ালা, মজুর, শ্রমিকের ঘাম ঝরানো অর্থ। সারা দিন পোশাক কারখানায় ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করা বোনটির মালিকানা আছে এই সেতুতে। যে প্রবাসী কঠিন পরিশ্রম করে প্রায় পুরো টাকা দেশে পাঠান, তিনিও পদ্মা সেতুর একজন অংশীদার। পদ্মা সেতু এ দেশের জনগণের সম্মিলিত শক্তির এক প্রমাণ। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রাক্কালে এ দেশের জনগণ রাজনীতিতে একটি ঐক্যের মেলবন্ধন দেখতে চেয়েছিল। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে এই উপলক্ষে দেশের সব রাজনীতিবিদ এক কাতারে মিলিত হবেন। জনগণকে বীরত্বের জন্য অভিনন্দন জানাবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি তার বিপরীত চিত্র। পদ্মা সেতুর অর্জনকে মøান করতে যেন নীরবে চলছে আত্মঘাতী সব আয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঝে-মধ্যেই বলেন, ‘বাঙালি দুর্ভাগা জাতি। যখন বাঙালি সুখে থাকে, ভালো থাকে তখনই ষড়যন্ত্র হয়। সব অর্জনকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয় একটি গোষ্ঠী।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহন করে। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বাঙালির প্রতিটি প্রাপ্তি লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে। আর প্রতিটি অর্জনের পথেই ষড়যন্ত্র হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে যা ঘটছে তা শেখ হাসিনার বক্তব্যকেই নতুন করে মনে করিয়ে দিল। পদ্মা সেতু হবে না হবে না বলে যারা এত দিন নিজেদের সান্ত¡না দিচ্ছিলেন, তারাই কি এখন দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে এটা সেটা করতে চাইছেন? কোথাও আগুন লাগিয়ে, পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে, কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গোলযোগ সৃষ্টি করে পদ্মা সেতু থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চাইছেন। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক অসাধারণ মাইলফলক। তাঁর সাহসের এক বিজ্ঞাপন। যে নেতা সাহস করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মা সেতু বানাতে পারেন, তাঁকে কি এটা সেটা করে ভয় দেখানো যায়? ২৫ জুনের আগে বাংলাদেশে হয়তো আরও অনেক কিছুই ঘটবে। আরও গুজব ছড়ানো হবে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে হয়তো আরও কিছু ঘটানোর চেষ্টা হবে। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে জনগণের ভালোবাসা তাতে এতটুকু বিবর্ণ হবে না। ষড়যন্ত্র করে সাময়িকভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় হয় সত্যের। পদ্মা সেতু সেই সত্যেরই এক বিজ্ঞাপন।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
[email protected] সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন